কুটকুট আর থপথপ এর মধ্যে ভারি বন্ধুত্ব হল |
সে অনেক কাল আগের কথা। কুটকুট নামের এক ছোট্ট ইঁদুর ছিল। সে থাকত পাহাড়ের এক গর্তের মধ্যে। সেই পাহাড়ের সামনে ছিল সায়র। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনার জল গড়িয়ে আসত সায়রে। অনেকদিন ধরে জল গড়িয়ে আসার জন্য সেখানে এক নালার সৃষ্টি হয়। থপথপ নামের এক ছোট্ট ব্যাঙ সেই নালাতে থাকত তার পরিবারের সাথে। এক পাড়াতে থাকার জন্য কুটকুট আর থপথপ এর মধ্যে ভারি বন্ধুত্ব হল।
প্রতিদিন সকালে থপথপ তার ছোট পা নিয়ে লাফাতে লাফাতে বন্ধু কুটকুট এর সাথে দেখা করতে যেত। সারাদিন ধরে অনেক খেলাধুলো,হুটোপাটির পরে দুপুর বেলা থপথপ বাড়ি ফিরে যেত। এই ভাবে দুই বন্ধুর দিন কাটছিল বেশ মজাতে।
জোর করে তাকে টানতে টানতে নিয়ে চলল নিজের নালার দিকে |
কিন্তু সেই সুখের দিন আর বেশি দিন থাকলো না। দুই বন্ধুর মধ্যে সামান্য কারণ নিয়ে ঝগড়া হয়ে গেল। হয়েছে কি,থপথপ রোজই কুটকুট এর বাড়ি খেলতে আসে। কুটকুট কে অনেক বলার পড়েও সে থপথপ এর বাড়ি খেলতে যেতে চায়না। না যেতে চাওয়ার কারণ হিসাবে কুটকুট বলে তোমার বাড়ি জলের মধ্যে,আর আমি ডাঙ্গার প্রাণী। আমার কি আর স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা পোষায়। থপথপ অতো শত যুক্তি বোঝে না। তার খালি মনে হয় কুটকুট ইচ্ছা করেই তার বাড়ি আসেনা। তাই একদিন থপথপ একটা বুদ্ধি করল কুটকুটকে জব্দ করার। সেদিন সে একটা দড়ি নিয়ে গেল খেলতে যাওয়ার সময়। আর খেলার ছলে কুটকুট এর লেজে সেই দড়ি বেঁধে দিল। তারপরে কুটকুট এর কোন আপত্তি না শুনেই জোর করে তাকে টানতে টানতে নিয়ে চলল নিজের নালার দিকে।
সে হাবুডুবু খেতে লাগলো |
নালার কাছে গিয়ে থপথপ জলে ঝাপ দিল। কুটকুট সাঁতার জানে না সে জলের প্রাণী নয়। একটু পরেই সে হাবুডুবু খেতে লাগলো। নালার ধারেই এক পুরনো গাছে থাকতো এক বাজপাখি। জলের দিকে তাকিয়ে বাজপাখি সেইদিনের খাওয়ার জন্য মাছের অপেক্ষায় ছিল। সে বাচ্চা একটা ইঁদুরকে ডুবতে দেখে ঝাঁপিয়ে পরে টেনে তুলল জল থেকে। কুটকুটের লেজে থপথপের পা বাঁধা থাকার জন্য সেও জল থেকে উঠে এলো বাজপাখির টানে। বাজপাখি দুজনকে নিয়ে গিয়ে ফেলল শুকনো মাটিতে। কিছুক্ষণ বাদে কুটকুটও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল। ততক্ষণে পায়ের দড়ি আলগা হয়ে গেছে। আর থপথপ তো কখনই ডাঙ্গায় এসে বাজপাখিকে দেখে আবার জলে ঝাপ দিয়েছে। সুস্থ হলে বাজপাখিকে দেখে কুটকুট ভীষণ ভয় পেল। তখন বাজপাখি কুটকুটের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল- যাও বাড়ি যাও, আর বাড়ি গিয়ে ভেবে দেখো মূর্খ বন্ধু আর বুদ্ধিমান শত্রু কাকে ত্যাগ আগে করা উচিৎ। এই বলে বাজপাখি আবার উড়ে গিয়ে বসল নিজের গাছের ডালে খাওয়ার এর সন্ধানে।
সে হাবুডুবু খেতে লাগলো |
আফ্রিকান উপকথা থেকে প্রভাবিত