এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে যাচ্ছিলেন অপর্ণা। যদিও জানেন তাতে
কিচ্ছু হবেনা, একটা কথাও শুনবে না মেয়েটা। তাও তাও তিনি বলে যাচ্ছিলেন। এত সজাগ থাকা
সত্ত্বেও মেয়ে পছন্দ করল কিনা একটা আধ পাগলা ছেলেকে। চালচুলো হীন এক মুখ দাঁড়ি নিয়ে
বড় বড় চোখ করে সারাক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে কি সব আবোলতাবোল ভাবে। এখনকার যুগেও ঝাণ্ডা
কাঁধে নিয়ে দেশ উদ্ধারের স্বপ্ন দেখে যে, তাকে পাগল বলে কি ভুল করেছেন তিনি!
কত বয়স ছিল তখন ছাব্বিশ কি সাতাশ হবে, বাড়ির অমতে যে মানুষটার
হাত ধরে বেড়িয়ে এসেছিলেন তিনি কই তার তো একটুও সময় লাগলো না পাশ থেকে সরে যেতে। নিজেই বাবা মা উভয় ভূমিকা পালন করেছেন যথাসাধ্য। এর পড়েও নিজে
যে ভুল করেছিলেন সেটা কখনোই পূজার সাথে হতে দিতে পারেন না। সেই আত্মভোলা চাহুনি, সেই
দুনিয়া বদলে দেওয়ার মত জিদ, আবার একটা নিরুদ্দেশ, আবার একটা অপর্ণা সৃষ্টি হওয়ার আগেই
সম্ভাবনার গলাটিপতেই হবে।
চিৎকার করতে করতে ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন অপর্ণা। কেন তুই
ওই ছেলেটার সাথেই থাকতে চাস? আজ তোকে উত্তর দিতেই হবে। মার কথার একটাও উত্তর না দিয়ে
চুপ করে মুখ বুজে বসেছিল সে। আর এই অবাধ্যতা নিতে পারলেন না অপর্ণা। সমস্ত শালীনতা সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে চুলের মুঠি ধরে
ফেলে দিলেন পূজাকে। জীবনে
প্রথম মায়ের এমন ব্যাবহারে থতমত খেয়ে গেল পূজা। মুখ ঢেকে সবটা পিঠ পেতে নিলো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে
চড়ের পর চড় মারতে থাকলেন অপর্ণা। অতিরিক্ত উত্তেজনা আর নিতে না পেরে বসে পড়লেন মাটিতে।
তবুও জিজ্ঞাস করে যাচ্ছিলেন কিসের জন্য পূজা এই ছেলেটার সাথেই থাকতে চায়। ধীরে ধীরে মুখ থেকে হাত সরিয়ে ক্লান্ত মায়ের কাছ ঘেঁসে
এলো পূজা। তারপর মায়ের মুখের
দিকে তাকিয়ে বলল, আমি যে অর্ক-র গায়ে বাবার গন্ধ পাই মা। বাবার আমার কাছে না থাকার
অভাবকে পূরণ করে সেই গন্ধ। বিশ্বাস কর অবিকল বাবার গায়ের গন্ধ।