Saturday 11 November 2017

গন্ধ


এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে যাচ্ছিলেন অপর্ণা। যদিও জানেন তাতে কিচ্ছু হবেনা, একটা কথাও শুনবে না মেয়েটা। তাও তাও তিনি বলে যাচ্ছিলেন। এত সজাগ থাকা সত্ত্বেও মেয়ে পছন্দ করল কিনা একটা আধ পাগলা ছেলেকে। চালচুলো হীন এক মুখ দাঁড়ি নিয়ে বড় বড় চোখ করে সারাক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে কি সব আবোলতাবোল ভাবে। এখনকার যুগেও ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে দেশ উদ্ধারের স্বপ্ন দেখে যে, তাকে পাগল বলে কি ভুল করেছেন তিনি!

কত বয়স ছিল তখন ছাব্বিশ কি সাতাশ হবে, বাড়ির অমতে যে মানুষটার হাত ধরে বেড়িয়ে এসেছিলেন তিনি কই তার তো একটুও সময় লাগলো না পা থেকে সরে যেতে। নিজেই বাবা মা উভয় ভূমিকা পালন করেছেন যথাসাধ্য। এর পড়েও নিজে যে ভুল করেছিলেন সেটা কখনোই পূজার সাথে হতে দিতে পারেন না। সেই আত্মভোলা চাহুনি, সেই দুনিয়া বদলে দেওয়ার মত জিদ, আবার একটা নিরুদ্দেশ, আবার একটা অপর্ণা সৃষ্টি হওয়ার আগেই সম্ভাবনার গলাটিপতেই হবে।

চিৎকার করতে করতে ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন অপর্ণা। কেন তুই ওই ছেলেটার সাথেই থাকতে চাস? আজ তোকে উত্তর দিতেই হবে। মার কথার একটাও উত্তর না দিয়ে চুপ করে মুখ বুজে বসেছিল সে। আর এই অবাধ্যতা নিতে পারলেন না অপর্ণা। সমস্ত শালীনতা সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে চুলের মুঠি ধরে ফেলে দিলেন পূজাকে। জীবনে প্রথম মায়ের এমন ব্যাবহারে থতমত খেয়ে গেল পূজা। মুখ ঢেকে সবটা পিঠ পেতে নিলো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চড়ের পর চড় মারতে থাকলেন অপর্ণা। অতিরিক্ত উত্তেজনা আর নিতে না পেরে বসে পড়লেন মাটিতে। তবুও জিজ্ঞাস করে যাচ্ছিলেন কিসের জন্য পূজা এই ছেলেটার সাথেই থাকতে চায়। ধীরে ধীরে মুখ থেকে হাত সরিয়ে ক্লান্ত মায়ের কাছ ঘেঁসে এলো পূজা। তারপর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি যে অর্ক-র গায়ে বাবার গন্ধ পাই মা। বাবার আমার কাছে না থাকার অভাবকে পূরণ করে সেই গন্ধ। বিশ্বাস কর অবিকল বাবার গায়ের গন্ধ।

দিল বেপারওয়া

আঁকা- আমি।

কম্পিউটার খারাপ হয়েছে অনেক দিন হল। ল্যাপটপটাই এক মাত্র সম্বল। তবে তারও বয়স হয়েছে। খুব একটা কাজের কথা বলা যায় না। অবসর সময়ের কাজকর্ম তাই মোবাইলেই সারতে হয়। তাতে যে সব সময় মন ভরে সেটা নয়। কিন্তু উপায় নেই।  
  

আমার খুব প্রিয় গানের কয়েকটা লাইন। গানটা শুনলেই এই ছবিটা ভেসে ওঠে। মোবাইলেই করতে হল। ভুল তো রয়েছে। তাও মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য মোবাইলের সাহায্য ও মন্দ নয়।

Thursday 2 November 2017

বাটা

ছবি-ধার করা অবশ্যইকিন্তু কার থেকে মনে পড়ছে না 

তথাকথিত শপিং বলতে যা বোঝয়, মানে সব্বাই যা বুঝে ও করে থাকে আমার তাতে প্রবল অনীহা। কারণ আমার কেনাকাটা করতে খুব বেশি হলে ঘণ্টা খানেক লাগে। বাকিরা তার চার গুন পাঁচ গুন সময় নিয়ে শখ মেটায়। আর আমি চরমতর থেকে চরমতম একঘেয়েমির মধ্যে বাকি সময়টা কাটাই। কেনাকাটার আর এক বিরক্তিকর পর্ব হল জুতো কেনা। তার স্বপক্ষে আমার দৃঢ় যুক্তি আছে। আমার পায়ের মাপের জুতো পাওয়া মোটেই সহজ নয় এবং কঠিন কাজে আমি যথেষ্ট কুঁড়ে মানুষ। তাই আমার পরিত্রাতা একমাত্র বাটা আর মাঝে সাঝে খাদিমস্। বিরক্তিকর কাজটা পরের জন্য ফেলে রেখেছিলাম। ভরসা ছিল হাজরার বাটাতে ঢুকে চট জলদি সমস্যা সমাধান। সেই বুঝে গটগটিয়ে দোকানে ঢুকে প্রথমটায় বুঝতেই পারিনি ব্যাপারটা কি হল। জুতোর বদলে সারি দিয়ে জামা কাপড়ের থান সাজানো। তার পরও মনে হল বাটা বুঝি জুতোর পাশাপাশি থানও রাখছে। যা প্রতিযোগিতার যুগ ওয়ানস্টপ না হলে বুঝি শেষ রক্ষা নেই। তারপরও চোখ ঘুরিয়ে পাদুকার টিকিটিও না দেখতে পেয়ে যখন উসখুস করছি একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন আমার কি চাই। আমি আমতা আমতা করে বললাম, আমি মানে জুতো- মানে এখানে বাটার জুতোর দোকান ছিল। কর্মচারীটি হেসে জানালেন বাটা বন্ধ হয়ে গেছে সেই ফেব্রুয়ারি মাসেই। বিষয়টা বুঝে বিশ্বাস করতে বেশ কিছু সময় লাগলো। বাকিদের কথা বলতে পারবনা, তবে আমার কাছে এটা মনখারাপ এর।


বহুদিন ধরেই, ঠিক জানিনা কতদিন, বাটা আমাদের তথাকথিত মিটিং পয়েন্টধারীর কাজ করছে। তেনার সাথে তেনাদের পাড়ায় টোটো করতে যাওয়ার আগে ও পরে বাটা। বাটার দোকানের সামনে থেকে পূজাবার্ষিকী কেনা। পাশে মিষ্টির দোকানে উঁকি দেওয়া। সব কিছুর সাথে বাটার দোকানটা যে কতটা জড়িয়ে ছিল তা আজ তার না থাকাতে বেশী করে মনে হচ্ছে। অনেকে আদিখ্যেতা বলতেই পারেন। কিন্তু আমার কাছে আবারও একটা পুরানো দিনের হারিয়ে যাওয়া। আনিচ্ছা সত্ত্বেও গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়া।

গল্প-অল্প-স্বল্প





বহু দিন থেকে একটা ব্লগ লেখার ইচ্ছা ছিল। ঠিক কবে তার দিন সাল তারিখ মনে নেই। কিন্তু ইচ্ছা ছিল।সেই তাগিদ থেকে গুচ্ছের ব্লগ পড়ে ফেললাম। অনেক ব্লগারকে ফলোও করে ফেললাম। ঝুড়ি ঝুড়ি লেখার খসড়া এসে মাথায় জায়গা নিলো। তারপর বেশ কিছু দিন গেল কি নাম হবে তাই নিয়ে যমে মানুষে টানাটানিওই দিদি কি নাম দিয়েছে। সেই দাদা লেখাটাকে কেমন ভেঁজেছে। সেই সব নিয়ম মেনে ব্লগ পড়ার বাসিন্দা হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। কাজ ও চলছিল জেট গতিতেতৈরি হল ব্লগএকদিনেই একাধিক বিষয়ে লেখা পড়ে গেল। চেনা,অচেনা,সেমি চেনা কয়েক জনকে পড়ার অনুরোধ ও করে ফেলা হল। ব্যাস। তবে তার বেশি নয়। কারণ ততদিনে আমার একনিষ্ঠ মন অন্য কোন বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর আমিও তার পিছনে ছুটেছি। 

জীবনের শুরুর দিকের সময় গুলো অনেকটাই ‘গ্রোইং মাউন্টেন্স এর মত। তাই একটু অস্থির আর কাঁচা।‘ তখনও গ্রে হেয়ার এর সাক্ষাৎ ঘটেনি। তবুও জানতাম এই অল্প বেঁচে থাকার দিন গুলোতে অনেক কাজ অনেক তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে। কোথাও যেন না আক্ষেপ থেকে যায়, এইটা করা হল না, ওইটা জানা হল না বলে। বছর গুলো হুড়মুড়ীয়ে চলে গেল। একটা দুটো করে প্রায়ই পাকা চুলের দেখা মেলে এখন। বেশিক্ষণ মেরুদণ্ড সোজা রাখা যায় না। এখন অনেক কাজ একসাথে করার থেকে যেকোনো একটা কাজকে মন দিয়ে ঠিক ভাবে করতে না পারার দুঃখটাই বেশি টানে। ছোট বেলার এক এক স্তরে এক এক দল বন্ধুদের সাথে আলাপ হয়। অজান্তেই তাদের স্বপ্ন গুলো নিজের স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে পড়ে। হাজার বন্ধুত্বের ভিড়ে কোথায় যেন নিজের সব থেকে কাছের বন্ধুটাকেই চেনা হয় না। নিজের সাথে নিজের গল্প কারাটাই হয়ে ওঠেনা। নিজের সমস্ত ভুলে দোষারোপ করলেও, ভালো কাজে কোনোদিন উপহার জোটে নি। সেই না করা কাজকে শেষ করার তাগিদ থেকেই এবারের ব্লগ। খালি একটু নিজেকে সময় দেওয়া। আর কিছুনা। এখন ভাবি ভালোই হয়েছে আগে এই কাজটা শুরু করিনি। করলে লেখা গুলো নির্ঘাত কোন দাদা বা দিদির মত হত। তাতে আর যাই থাকনা কেন, আমার অস্তিত্বের লেশ মাত্র থাকত না।