বিগত ছয় মাস বেশ ভালোই কাটছে পলাশের। সাত বছরের বিবাহিত একঘেয়ে ঘ্যানঘ্যানে জীবন নয়, এখনটা বেশ অন্যরকম। পৃথাও এখন বেশ অনেকটা অন্য রকম। আগের মত এটা কেন করছো না, সেটা কেন করছো না বলে মাথা খায় না। পলাশ চাকরি ছেড়েছে সেও প্রায় ছয় মাস হল। তারপর থেকেই সব বদলে গেছে। পৃথাকে এখন অনেকটাই সময় দিতে পারে। নিজের স্বপ্ন পূরণের পথেও এখন চাকরি নামক কাঁটা খোঁচা দেয় না। তাই ভোর থাকতেই ক্যামেরা কাঁধে বেড়িয়ে পরে। এদিক সেদিক ঘুরে মনের মত সব বিষয় লেন্সে বন্দি করার চেষ্টা করে। রোজই যে সফল হয় তাও নয়। তবে মাঝে মধ্যে দারুণ সব মুহূর্তরা ধরা দেয়। খারাপ ভালো যাই ছবি সে তুলুক না কেন পৃথাকে সবটা দেখায়। পৃথাও সবটা অপলক দৃষ্টি দিয়ে দেখে। পলাশের উৎসাহ দ্বিগুণ হয়।
বাড়ির কাজেও পলাশ একহাতেই সামাল দিচ্ছে। দুটো মাত্র প্রাণী তারা, কি আছে এটুকু করতে। সকালের জলখাবার একসাথেই খায় দুজনে। পলাশের মনটা হালকা হয়ে যায়। কত্তদিন বাদে তারা নিজেদের মনের মত করে সময় কাটাচ্ছে। সেই বিয়ের প্রথম কিছুই দিন তারা এমনটা করে কাছাকাছি এসেছে। এতকিছু ভালোলাগার মধ্যে খালি একটা জিনিস পলাশের খচ খচ করে। আজ সেটারও সমাধান পেয়েছে। নিউমার্কেটের বেশ কিছু দোকান ঘুরে অবশেষে পেয়েছে। দাম একটু বেশি হলেও কিচ্ছু করার ছিলনা। জিনিসটা একদম মন মত।
লাইটটা জ্বালিয়ে ঘরে ঢুকলো পলাশ, পৃথাকে আজ চমকে দেবে। পিছন থেকে জাপটে ধরে পরচুলটা পড়িয়ে দিল পৃথার মাথায়।
-দেখ দেখ দারুণ হয়েছে না। পুরো তোমার চুলের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে কিন্তু। তোমাকে দারুণ মানাবে। আর তোমার কপালের সিঁথির পাশের ক্ষতটা ঢেকে দেবে। কি গো কিছু বলনা!! ভালো লাগেনি? এই এক ঝামেলা হয়েছে। আজ ছয় মাস তুমি একটাও কথা বলো নি আমার সাথে, সে খেয়াল আছে। কি গো? আচ্ছা সেদিন না হয় একটু বেশি রেগে গেছিলাম। তাইতো তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি। আমিতো একটু বদরাগী আছি সেই বিয়ের আগে থেকেই। তুমি তো সব বোঝো। কি গো!! ওই!!! ধুর!!! ভাল্লাগে না। আচ্ছা তুমি থাকো তোমার রাগ নিয়ে, আমি চললাম রান্না ঘরে। রান্না সেরে এসে আজ কি কি ছবি পেলাম দেখাচ্ছি। আজ ময়দানে একটা দারুণ ছবি পেয়েছি। তোমাকে দেখাচ্ছি পরে, বোলো কেমন হয়েছে।
পলাশ রান্না ঘরের দিকে চলে গেল হিম ঘরের দরজা ভেজিয়ে। পৃথার দেহটা বসে আছে চুপচাপ, পলাশের আনা পরচুলটা মাথায় নিয়ে।