Friday 28 September 2018

চটজলদি হালিম

হালিম


গত শীতটা খাব খাব করেই ফসকে গেছে প্রতাপ বাবুর। তাই অফিস থেকে বেরোতেই যখন স্বয়ং ভগবান দর্শনের মত হালিম ওয়ালার দেখা পেলেন, তখন আগুপিছু কিছু না ভেবেই জাস্ট ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তারপর থেকেই শুরু হল বিবেকের তাড়না। অনিমা আর প্রতাপ বাবু দুজনেরই হল খাওয়ার নেশা। বিয়ের সময় বাবার পছন্দ নিয়ে একটু সন্দেহ থাকলেও পরবর্তী ১৮টা বছরে তিনি জেনেছেন গুরুজনের সিধান্ত সর্বদাই সঠিক। সারা বছরের যত ধরনের খাওয়া-দাওয়া হয়ে থাকে তা তারা দুজনে মিলে কিচ্ছু বাদ দেনা না। সুধু গতবারই কাজের চাপে হালিম খেতে জাওয়ার প্ল্যানটা হয়ে ওঠেনি। প্রতাপ বাবু রেড মিট জাতীয় খাওয়ার শীতে খাওয়াই বেশি পছন্দ করেন, তাতে করে হজমের খুব একটা অসুবিধা হয়না আর লোভে পরে একটু বেশি খেলে হাঁসফাঁস করার ও কিছু থাকেনা। তবুও অসময়ে রেড মিট এবং বিগত ১৮বছরের ফুড পার্টনারকে বাদ দেওয়ার মত দু-দুটো কাজ করার অপরাধ বোধটা ক্রমে চেপেই বসছিল। এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই চট করে বুদ্ধিটা এসেই গেল। এ সি বাসে বসার জায়গা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট ফোনের ব্রাউজারে হাউ টু মেক হালিম?  বলে সার্চ করতেই একরাশ অপশন এসে গেল। ব্যাস কাল বাদে পরশু রবিবার। বাজার থেকে মাংস কিনে এনে নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াবেন গিন্নীকে। রান্নাটা তিনি মন্দ করেননা। মাঝে একটা দিন বিবেককে তিনি ঠিক সামলে নেবেন।

উপকরণঃ সময় ৩০মিনিট

হাড়ছাড়া মাংস-২৫০ গ্রাম ছোট টুকরো করা দালিয়া(ভাঙ্গা গম)-২০০ গ্রাম, বাটা পোস্ত-২ বড় চামচ, দারচিনি দু'টুকরো লবঙ্গ ৪টি ছোট এলাচ ৪টি , নুন স্বাদ অনুযায়ী, হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ, লংকা গুঁড়ো-১ চা চামচ, ধনে পাতা পুদিনা কুচোনো-১ বড় চামচ, কুচোনো পেঁয়াজ-২টি, দই-২০০ গ্রাম, রসুন বাটা-১ চা চামচ, আদা বাটা-১ চা চামচ।

প্রণালীঃ হাড়ছাড়া মাংস ছোট টুকরো করে নিন। পোস্তবাটাধনেপাতা ও পুদিনা বাদে সমস্ত মশলা এবং দই দিয়ে মাংস মেখে ৬/৭ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর মাংস উনানে বসিয়ে তাতে দালিয়া দিন। সব সিদ্ধ হয়ে গেলে বেটে নিন। এবারে পোস্তবাটা দিয়ে ৫/৬ মিনিট রান্না করুন। বাদামী করে ভাজা পেঁয়াজ, লেবুর রস ধনেপাতা ও পুদিনা দিন। হালিম তৈরি।

Saturday 22 September 2018

Pursuit Of Happiness

ছবি- Susie Glaze & The Hilonesome Band: “Not That Kind Of Girl”



"Try to make at least one person happy every day, and then in ten years you may have made three thousand, six hundred and fifty persons happy, or brightened a small town by your contribution to the fund of general enjoyment."
- Sydney Smith
আমার ক্ষেত্রে যদিও ব্যক্তির পরিবর্তে প্রাণী এবং উদ্ভিদ দুটোই সমান ভাবেই খাটে।

Friday 21 September 2018

অন্য দিন

|| VISION ||




অন্য একটা দিন আসে ঠিক অন্য দিনের মত
ক্রমাগত রূপ বদলায় যুদ্ধ জেতার ক্ষত।
জীবিত কারাগারে আনাগোনা অবিরত
তবু,অন্য একটা দিন আসে ঠিক অন্য দিনের মত।

তুফান তোলে বুক পকেটে ভুলে যাওয়া স্মৃতি
কাজল কালো নয়ন জুড়ে মেঘের উপস্থিতি
আঙ্গুল জুড়ে খেলা করে শীতল নদীর জল
গলির পথে বাঁক নিয়েছে নতুন পথের দল।

নগর জোরা ভিড়ের মাঝে মুক্ত ডানা পাখী
রাতের মাঝে হারিয়ে যাবো অবুঝ হবি নাকি?
বেশ তো ছিলাম ধোঁয়ায় মাখা জীবন খানি নিয়ে

বাঁচার কেন সাধ জাগালি ভোরের হাওয়া দিয়ে!


Wednesday 12 September 2018

আমি জানলা দিয়ে দেখলাম

বহু ছোট বেলার আঁকা ও লেখা 



আঘাত খাওয়া পাখীর মত মেয়েটা মূর্ছা যাচ্ছিল রাস্তায়
আমি জানলা দিয়ে দেখলাম
কাল রাত্রে একটা স্বপ্ন দেখলাম লাল রঙ এর
যা ছিল বিশুদ্ধ সবুজ গন্ধে পূর্ণ।

দুধ ঢালা বিছানায় আবার স্নান সেরে ঘুম,
এবার স্বপ্ন হলুদ রং এর
বাইরে ছাই রঙা রাতের চলমান নিস্তব্ধতা,
জেগে আছি, আমি জানলা দিয়ে দেখলাম।

আবার মেয়েটি রাস্তায় পড়ে,
বিড়ালটা পাঁচিলে হাত চাটছে, সুস্বাদু খাবার।
আমার আর বিড়ালটার প্রতীক্ষা একসঙ্গে,

আমি জানলা দিয়ে দেখলাম।


Thursday 6 September 2018

লোভী কুমীর

সে ছিল ভীষণ রকম লোভী


পুরনো এক জলাশয়ের ধারে এক কুমীর এসে থাকা শুরু করল। সে ছিল ভীষণ রকম লোভী। লোভের কারণেই জলাতে থাকা প্রাণীদের সে ধরে ধরে খেতে লাগল। এমনকি জলার পাশের প্রাণীরাও বাদ গেলনা তার কবল থেকে। যারা পালাতে পারল তারা বেঁচে গেছিল। কিছুদিনের মধ্যেই জলাশয় ও আশেপাশের অঞ্চল প্রাণ শূন্য হয়ে উঠল। জলাতে কুমীর ছাড়া কোন জীবন্ত প্রাণী থাকল না। খিদের জ্বালায় অল্পদিনের মধ্যেই কুমীরের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। কুমীরের কাণ্ড কারখানা সব পশু পাখিদের মাঝে জানাজানি হয়ে যায়। কেউ ভুলেও সেই পথে পা মাড়ায় না।

সময় সুন্দর সুন্দর খাওয়ারের স্বপ্নে মশগুল ছিল



রঘু থাকে জলাশয়েরই পাশের গ্রামে। আজ তার বাবা ফিরেছে অনেকদিন পরে বাণিজ্য থেকে। মা তাই ঘরে মাংস রান্না করবে। কতদিন বাদে বাড়িতে ভালমন্দ খাওয়া দাওয়া হবে। হাট থেকে মাংস কিনে ফেরার পথে তাই সে জলার রাস্তা ধরল যাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারে। গ্রামের লোকেরা মোটেও সেই কুমীরের খবর জানত না। সেই জন্য রঘুও জলার পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সুন্দর সুন্দর খাওয়ারের স্বপ্নে মশগুল ছিল।

কুমীর আবার গলার স্বর নরম করে বলল


কুমীর রঘুকে আসতে দেখল। রঘুর হাতে থাকা মাংসের গন্ধে লোভে তার জিভে জল এসে গেল। প্রথমে কুমীর ঠিক করল রঘুকে বোকা বানিয়ে মাংসটা খাবে। পরে তার লোভী মন তাকে রঘুকেও খেতে সায় দিল। সে এক ফন্দি আঁটল। প্রথমে সে রঘুকে অনুরোধ করবে তাকে একটু মাংস খেতে দিতে। যেই সে সেটা দিতে কুমীরের আছে এগিয়ে আসবে অমনি কুমীর রঘুকেও কামড়ে ধরে জলে টেনে নিয়ে যাবে। তাহলে রঘুর আর কিচ্ছুই করার থাকবে না।
কুমীর রঘুকে ডাকল, 'এই যে ভাই শুনছো?
রঘু কুমীরকে দেখে দারুণ ভয় পেয়ে গেল। ছুটে পালাতে যাবে এমন সময় কুমীর আবার গলার স্বর নরম করে বলল, 'আমি অনেক দিন কিছুই খাইনি আমাকে এক টুকরো মাংস দেবে?'
রঘু বলল, 'না না, তুমি আমাকে খেয়ে ফেলবে।
কুমীর তখন গলার স্বর কাঁদো কাঁদো করে অনুরোধ করল, 'প্রতিজ্ঞা করছি আমি তোমার একটুও ক্ষতি করবো না। একটুকরো মাংস দিয়ে আমার প্রাণটা বাঁচাও দয়া করে।
খরগোশ কুমীর আর রঘুর কথা শুনছিল এক ঝোপের আড়াল থেকে


অন্যদিকে এক খরগোশ কুমীর আর রঘুর কথা শুনছিল এক ঝোপের আড়াল থেকে। আগে সে এই জলার কাছেই থাকত। কুমীরের অত্যাচারে সেও পালাতে বাধ্য হয়েছিল। কুমীরের ওপর নজর রাখার জন্য সে ঝোপের আড়ালে লুকিয়েছিল। রঘুর জীবনের ক্ষতির আশংকা দেখে খরগোশ ঝোপ থেকে বেড়িয়ে আসতে বাধ্য হল। খরগোশ কে দেখে কুমীরের লোভ আরও বেড়ে গেল। সে ভাবল আরে এতো দারুণ হল। এক সাথে এতো খাওয়ার। প্রায় অনেক দিন পেট ভরানো নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হবেনা। সে তখন রঘুর দিক থেকে খরগোশের দিকে মুখ ফেরালো। সেই সুযোগে রঘু এক ছুটে গ্রামের দিকে দৌড় দিল। তখন কুমীর রঘু পালাচ্ছে দেখে সেই দিকে এগিয়ে যাওয়ার অবকাশে খরগোশ এক ছুট্টে পগারপার। ধূর্ত কুমীর দারুণ বোকা বনে গেল।

কুমীরকে দারুণ লাঠিপেটা করল


রঘু হাঁপাতে হাঁপাতে গ্রামের লোকদেরকে গিয়ে সব জানাল। তখন গ্রামের লোকেরা দল বেঁধে জলাতে এসে কুমীরকে দারুণ লাঠিপেটা করল। লোভী দুষ্টু কুমীরের ভীষণ শাস্তি হল।

আফ্রিকান উপকথা থেকে প্রভাবিত